নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঢাকা-বরিশাল নৌপথে বিলাসবহুল লঞ্চে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। গত ৫ বছরে অন্তত ৪ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে এই পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে। সর্বশেষ গত সোমবার অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে পারাবত-১১ নামক লঞ্চ থেকে। এমন খুনের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে যাত্রী সাধারণের মাঝে। তারা নদী পথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। এদিকে খুনের ঘটনায় নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে পরস্পরের উপর দোষ চাপাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, গত বছরের ২০ জুলাই বরিশালে এমভি সুরভী-৮ নামে একটি লঞ্চের স্টাফ কেবিন থেকে আঁখি নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল বরিশালগামী পারাবত-৯ লঞ্চে সিফাত নামে এক তরুণীকে হত্যার পর নদীতে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট ঢাকা থেকে বরিশালগামী পারাবাত-১০ লঞ্চের কেবিন থেকে উদ্ধার করা হয় মিনারা বেগম নামের নারীর লাশ।
সর্বশেষ গত সোমবার জান্নাতুল ফেরদৌস লাবনী নামের নারীর লাশ উদ্ধার করা হয় পারাবত-১১ লঞ্চের ৩৯১ নম্বর সিঙ্গেল কেবিন থেকে। যদিও উল্লিখিত হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে দুর্বল ব্যবস্থাপনার অভাবে খুনের পূর্বেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে অপারগ ছিলেন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ এবং বিআইডব্লিউটিএ। আর এ কারণে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চে খুনের মত জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ যাত্রীরা। এদিকে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ হত্যার দায় নিজেদের ঘাড়ে নিতে নারাজ। তার জানিয়েছে, লঞ্চে খুন-খারাবি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাদের নয়। সেই দায়িত্ব পালন করবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও এমভি সুন্দরবন লঞ্চের স্বত্বাধিকারী সাঈদুর রহমান রিন্টু বলেন, লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। তবে যাত্রীদের ভিড়ে এবং লঞ্চের কেবিনে হত্যাকা- সংঘটিত হলে প্রকৃত খুনিকে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া অনেক কেবিন যাত্রীই মিথ্যা পরিচয়ে লঞ্চে ওঠেন। এজন্য কেবিন ভাড়া নেয়ার আগে প্রতি যাত্রীর পরিচয়পত্র নিশ্চিত করা উচিত। রিন্টু বলেন, লঞ্চের স্টাফরা বাড়তি আয়ের আশায় প্রায় সময়ই নিজেদের কেবিন ভাড়া দিয়ে থাকেন। যে কারণে একাধিক হত্যাকা- ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বরিশাল নৌ থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, লঞ্চের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তাদের নয়। তবে লঞ্চ বরিশাল ঘাটে থাকাবস্থায় তারা বিষয়টির প্রতি নজর রাখেন। তিনি বলেন, সোমবারে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করছেন। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বদা সতর্ক রয়েছেন নৌ পুলিশের সদস্যরা।
Leave a Reply